+91-94331 24108 [email protected]

Appeal on World Disabled Day

Street Meeting of Blind Persons' Association in Kolkata on World Disabled Day, 2019

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের উপযুক্ত শিক্ষা, কর্মসংস্থানের অধিকার এবং সঙ্গীত ও ক্রীড়াক্ষেত্রে নৈপুণ্যের জন্য বিশেষ ভাতা প্রদান সহ ৯ দফা দাবীতে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন সফল করুন

দৃষ্টিহীনতা কোন দৈব অভিশাপ বা পূর্বজন্মের পাপের ফল নয়। মূলতঃ দারিদ্র্যজনীত অপুষ্টি, অসচেতনতা, ভুল চিকিৎসা বা দুর্ঘটনা—এইসব কারণেই এদেশে দেড় কোটিরও বেশি মানুষ এই দুর্ভাগ্য বহন করে বেড়াচ্ছে। মানুষের যোগ্য মর্যাদা নিয়ে বাঁচবার ন্যূনতম সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে এরা অভিশপ্ত জীবনযাপন করছে। অন্ধত্বের অসহায়তার সুযোগে সরকারী বঞ্চনা অবহেলার সিংহভাগ এদেরই প্রাপ্য। এমনকি প্রতিবন্ধীদের বিকাশের জন্য আইন রাইট্স্ অব্ পারসন্স্ উইথ ডিজাবিলিটিস ২০১৬-র বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশকেও অনায়াসে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখাচ্ছে কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার। তারা উন্নয়নের প্রসাদ যা বিতরণ করে তা সবটাই মুষ্টিমেয় উচ্চবিত্তের জন্য। তাইতো ১ শতাংশ অতি ধনবান দেশের ৭৩ শতাংশ সম্পদের মালিক। আর কোটি কোটি দরিদ্র মানুষ শিক্ষা, চিকিৎসা, চাকরির সামান্য সুযোগ থেকেও বঞ্চিত। তাদের মধ্যেই আরো অবহেলিত আরো অসহায় হলো প্রতিবন্ধীরা।

উক্ত আইনের বিভাগ ৩১-এর (I) এবং (II) নং ধারায় লেখা আছে, ৬-১৮ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিটি প্রতিবন্ধীকে বাধ্যতামূলক অবৈতনিক শিক্ষা দিতে হবে উপযুক্ত পরিবেশে। এরাজ্যের সাধারণ প্রাথমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে তো দৃষ্টিহীনদের শিক্ষাদানের কোন উপযুক্ত পরিবেশই নেই। এইসব স্কুলের কোন শিক্ষকই ব্রেল জানেন না। ফলে সাধারণ স্কুলে পাঠরত দৃষ্টিহীনদের অক্ষরপরিচয়টুকুও হচ্ছে না। শুধু কিছু নামতা আর ছড়া মুখস্থ করে তারা উঠে যাচ্ছে একের পর এক ক্লাসে। পাশ-ফেল প্রথা না থাকায় এই হতভাগ্যরা যে কিছু শিখছে না, তা ধরাও পড়েছে না যথাসময়ে। তাছাড়া অত্যধিক ছাত্রের চাপে দৃষ্টিহীনদের প্রতি আলাদা করে নজর দেওয়া শিক্ষকমহাশয়দের পক্ষে ইচ্ছা থাকলেও বাস্তবে সম্ভব নয়। অথচ এই সাধারণ স্কুলেই দৃষ্টিহীনদের ভর্তী করতে সরকার সমানে উৎসাহ দিয়ে চলেছে। আর শিক্ষাদানের উপযুক্ত পরিবেশ মোটের উপর বজায় রয়েছে যে স্পেশাল ব্লাইন্ড স্কুলগুলোতে, সেগুলোকে দুর্বল বানিয়ে বন্ধ করে দিতে সরকার যেন উঠে পড়ে লেগেছে। পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীনতম ক্যালকাটা ব্লাইন্ড স্কুল বা নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণমিশন ব্লাইন্ড বয়েজ একাডেমির মতো বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোতেও সরকার প্রয়োজনমতো শিক্ষক নিয়োগ করছে না, ব্যাহত হচ্ছে পঠনপাঠন।

আর্.পি.ডি. অ্যাক্ট ২০১৬-র বিভাগ ৩৪-এর (I) ধারা অনুযায়ী সমস্ত সরকারী দপ্তরে ৪ শতাংশ পদ প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত, তার মধ্যে ১ শতাংশ (রস্টার অনুযায়ী ১২ নং পদ) দৃষ্টিহীন এবং আংশিক দৃষ্টিসম্পন্নদের জন্য। কিন্তু এরাজ্যে এই সংরক্ষণ আজও রূপায়িত হয়নি। অধিকাংশ দপ্তরই এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন। প্রতিবন্ধীরা কী কাজ করার যোগ্য, তারা তা জানেনই না। এইজন্যই প্রয়োজনীয় জব সার্ভে করার কথা আইনের বিভাগ ৩৩-এর (I), (II) এবং (III) ধারায় পরিষ্কার উল্লিখিত আছে। প্রতি তিন বছর অন্তর এই জব সার্ভে পরিচালনার জন্য প্রতিবন্ধীদের প্রতিনিধিত্ব সহ একটি কমিটি তৈরিরও নির্দেশ আছে। কিন্তু রাজ্য সরকার মেলায়, খেলায় আর উৎসবে এত ব্যস্ত যে এই কাজটুকু করে উঠবার সময় পাননি। যোগ্য প্রতিবন্ধীদের চাকরি দিতে না পারলে বেকারভাতা দেবার নির্দেশ আছে আইনের ২৪-এর (I)-এর (H) ধারায়। কিন্তু এ ব্যাপারে অর্থব্যয় করলে নেতা-মন্ত্রীদের বিলাস-ব্যাসন আর বিদেশ ভ্রমণের টাকা আসবে কোথ্থেকে? তাই আইনের বাস্তব রূপায়ন নৈব নৈবচ।

অনেক দৃষ্টিহীন কণ্ঠসঙ্গীত, বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রবাদন বা নানান ইনডোর আউটডোর খেলা যেমন দাবা, ক্রিকেটে খুবই দক্ষ। দুঃখের বিষয়, এইসব প্রতিভাবানরা অধিকাংশক্ষেত্রেই এত দরিদ্র যে দক্ষতার পূর্ণাঙ্গ বিকাশের সুযোগই পান না। সরকারের প্রতি এদের পৃষ্ঠপোষকতার নির্দেশ রয়েছে আইনের বিভাগ ২৯-এর (A) এবং বিভাগ ৩০-এর (I) ও (II)-এর (E), (F) ধারায়। কিন্তু এদের সাহায্য করলে তো আর ভোটের ঝুলি ভরবে না। তাই এরা হয়ে থাকেন ব্রাত্য।
————————————
বিঃ দ্রঃ : প্রতিদিন বহু প্রতিবন্ধী মানুষ যে কলকাতা মেট্রো রেল পরিসেবা গ্রহণ করতে বাধ্য হন, পুনরায় তার ভাড়া বৃদ্ধি তাদের অসুবিধাকেই আরো বাড়ালো। আমাদের দাবী : সরকারী বাসের মতো মেট্রো রেলেও প্রতিবন্ধীদের এস্কর্ট সহ বিনা ভাড়ায় যাতায়াতের অধিকার দিতে হবে।

সরকারী মেডিকেল জার্নাল থেকেই জানা যায় প্রতিবছর, এমনকি সরকারী হাসপাতালেও, কয়েক ফোঁটা ভিটামিন (A)-এর অভাবে কয়েক লক্ষ শিশু দৃষ্টিহীন হয়ে যায়। অথচ আইনের ২৫-এর (II) ধারায় সরকারের প্রতি নির্দেশ প্রতিবন্ধকতা প্রতিরোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের। তাহলে সদ্যজাতদের প্রতি এই গাফিলতি কি অমার্জনীয় অপরাধ নয়? আইনের ২৪-এর (I)-এর (G) ধারায় দরিদ্র অক্ষম প্রতিবন্ধীদের ভাতা (Disability Pension) প্রদানের কথা আছে যার দ্বারা তারা জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে। এরাজ্যে “মানবিক” নামে এই ভাতার পরিমাণ মাসিক মাত্র ১০০০ টাকা! বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে এ কি ভাক্ষা দেবারই সমতুল নয়? এই আইনের কোন ধারা লঙ্ঘিত হলে তার দ্রুত বিচারের জন্য বিভাগ ৮৪ ধারায় জেলাস্তরে “Court of Session” নামে যে স্পেশাল কোর্ট গড়ে তোলবার সংস্থান রয়েছে, তা সরকার আজও কার্যকরী করলো না কেন?

আইনের প্রতি এই অবজ্ঞা থেকেই বোঝা যায়, সরকার দেশের কোটি কোটি দরিদ্র জনসাধারণ তথা প্রতিবন্ধীদের সুখ-সমৃদ্ধি বিধানের জন্য ক্ষমতায় আসীন হয়নি। এমতাবস্থায়, প্রতিবন্ধীদের ন্যায্য দাবী আদায় করতে গেলে দীর্ঘস্থায়ী দুর্বার গণ-আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া গত্যন্তর নেই। সেই পথেই অগ্রসর হতে বাধ্য হয়েছে ব্লাইন্ড পারসন্স্ অ্যাসোসিয়েশন সহ আরো কিছু সহযোগী সংগঠন। নিম্নলিখিত দাবীসমূহের ভিত্তিতে প্রতিবন্ধীদের এই ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের পাশে দাঁড়াবার জন্য আপামর জনসাধারণের প্রতি জানাই আন্তরিক আবেদন।

দাবীসমূহ

  • ১।
    • (ক) দশম শ্রেণী পর্যন্ত দৃষ্টিহীনদের শিক্ষা স্পেশাল ব্লাইন্ড স্কুলের মাধ্যমেই দিতে হবে,
    • (খ) এই বিশেষ বিদ্যালয়গুলির ৬০% পদে প্রতিবন্ধী শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।
  • ২।
    • (ক) সমস্ত সরকারী দপ্তরে ৪% পদে যোগ্য প্রতিবন্ধীদের নিয়োগ করতে হবে,
    • (খ)আইনের ৩৫ নং ধারা অনুযায়ী, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলিকে ৫% পদে প্রতিবন্ধীদের নিয়োগের ব্যাপারে ইনসেন্টিভ দিয়ে উৎসাহিত করতে হবে।
  • ৩। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাঙ্ক, রেল সহ সমস্ত সরকারী শূন্য পদ দ্রুত পূরণ করতে হবে।
  • ৪। প্রতি তিন বছর অন্তর প্রতিবন্ধীদের জন্য উপযুক্ত জব সার্ভের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • ৫। এক্সচেঞ্জে নথিভুক্ত হওয়ার ২ বছর পরই প্রতিবন্ধীদের মাসিক ৮০০০ টাকা বেকার ভাতা দিতে হবে।
  • ৬। সঙ্গীত বা ক্রীড়াক্ষেত্রে দক্ষ প্রতিবন্ধীদের বিকাশের লক্ষ্যে মাসিক ৮০০০ টাকা ভাতা দিতে হবে।
  • ৭। অন্ধত্ব প্রতিরোধে সরকারকে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  • ৮। দরিদ্র প্রতিবন্ধীদের দেয় মানবিক ভাতার পরিমাণ মাসিক অন্তত ৬০০০ টাকা করতে হবে।
  • ৯। প্রতিটি জেলায় স্পেশাল কোর্ট গঠন করে প্রতিবন্ধীদের ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.